বিশেষ প্রতিবেদক:
২০ মে হতে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল হওয়ায় ডিমওয়ালা মাছের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টিসহ মাছের মজুদ সংরক্ষণ, সুষ্ঠু ও বিজ্ঞানসম্মত সহনশীল আহরণ নিশ্চিত করতে সরকার এ সময়ে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এ সময়ে জেলেদের খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার ভিজিএফ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি জেলে পরিবারকে ৫৬ কেজি হারে চাল বরাদ্দ দেয়।

সরকারি এ বরাদ্দ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিতে নিজের কলেজ পড়–য়া ছেলে, বিদেশ ফেরত শাশুড়, ব্যবসায়ী শালা ও মামাতো ভাইয়ের নাম তালিকাভুক্ত করেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদ ও সাবেক মেম্বার নুরুল আজিম। সদ্য শেষ হওয়া জেলেদের তথ্য হালনাগাদের তথ্যে শঠতার আশ্রয় নিয়ে তিনি আত্মীয় স্বজনের নাম দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ সাবেক এ জনপ্রতিনিধি কোন সময় জেলে ছিলেন না। তবে নিজেকে জেলে বলে দাবি করেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম।

জানা যায়, ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালী সময় সরকার জেলে পরিবারের মাঝে ভিজিএফ প্রকল্পের আওতায় ৫৬ কেজি হারে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে জেলেদের তথ্য সরবরাহ করে একটি তালিকা তৈরি করেন। এ তালিকা তৈরিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং মেম্বারগণ সহযোগিতা করে থাকেন। কিন্তু কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নে জেলেদের তালিকা তৈরিতে সহযোগিতার পরিবর্তে নিজের পরিবারের সদস্যদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছেন ৩ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম। তথ্য সরবরাহ করতে যাওয়া ব্যক্তিকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে তিনি এমন অপরাধ করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ নিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

জেলেদের জন্য বিশেষ বিজিএফ মাস্টার রোল-২০২১ এর তালিকায় থেকে জানা যায়, ১৫৭ নং সিরিয়ালে রয়েছেন চেয়ারম্যান আবুল কালামের বিশ^স্তজন হিসেবে পরিচিত সাবেক মেম্বার মমতাজ আহম্মদ’র ছেলে বিএনপি নেতা নরুল আজিমের নাম। তিনি একজন ব্যবসায়ী ও ইসলামপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ১৫৬ নম্বারে রয়েছেন তার ছেলে চট্টগ্রাম মুহসিন কলেজ পড়ুয়া ছাত্র শাহ মোহাম্মদ শাকিল’র নাম। ১৬১ নম্বারে তার ভাই নুরুল হক, ১৫৫ নম্বার সিরিয়ালে রয়েছে শালা এরশাদুল হকের নাম। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রী ও স্থানীয় নুরুজ্জামানের ছেলে। ১৫০ ও ১৫৩ নাম্বারে রয়েছে তার মামাতো ভাই কবির আহম্মদের ছেলে ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান এবং রাজমিস্ত্রি মিনহাজ উদ্দিন। ১৫৪ নম্বারে রয়েছে শ্বাশুড় নুরুজ্জামানের নাম। তিনি বিদেশ ফেরত। ১৬২ নাম্বারে রয়েছে স্থানীয় জাফর আলমের ছেলে ব্যবসায়ী আবছারের নাম। ৫৩ নাম্বারে রয়েছে আবদুল আলমের ছেলে প্রবাসি মাহাবুব আলমের নাম।নিজে ও পরিবারের সদস্যদের জেল দাবি করে সাবেক মেম্বার নুরুল আজিম বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সবাই জেলে। আমার কোন ছেলে কলেজে পড়ে না। উপজেলা থেকে তালিকা করতে আসলে সেখানে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের নাম দিয়েছি।

তবে, ছেলে শাহ মো: আব্দুল্লাহ শাকিল মুহসিন কলেজে পড়ালেখার কথা স্বীকার করলেও এখন তার ছাত্রত্ব নেই বলে দাবি করেছেন।

স্থানীয়দের দাবি অনিয়মে ভরা এমন তালিকা বাতিল করে প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে নতুন তালিকা প্রস্তুত করতে হবে। অন্যথায় সরকারের আসল উদ্দেশ্য সুফল বয়ে আসবে না।

জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তারাপদ চৌহান বলেন, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ৭১২০ জন রেজিস্ট্রাটকৃত জেলের তালিকা মৎস্য অফিসে রয়েছে। নতুন জেলেদের রেজিস্ট্রেশন চলছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া, এটি চলতে থাকবে। যদি কেউ বাদ পড়ে তারা অন্তর্ভূক্ত হবেন। আর জেলে না হয়ে তালিকায় আসলে বাদ পড়বেন।

তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এ তথ্য এখনো যাচাইবছাই করা সম্ভব হয়নি। যাচাই বাছাই করে একটি তালিকা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে টাঙ্গিয়ে দেয়া হবে। সেখান থেকে অভিযোগ আসলে বাদ দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *